একনজরে রাঙ্গাবালী

নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত চরনজির দ্বীপের বাসিন্দারা

তুহিন রাজ
০৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:২৮ দুপুর
নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত রাঙ্গাবালীর চর নজির দ্বীপের বাসিন্দারা

যে চরে জনবসতি আছে, কিন্তু তাদের জন্য নেই নাগরিক সুবিধা। লেখাপড়া করার জন্য নেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য নেই সাইক্লোন শেল্টার। জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য নেই বেড়িবাঁধ। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নেই কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র। বিশুদ্ধ পানির জন্য নেই পর্যাপ্ত গভীর নলকূপ। নেই স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাও। এই নেই আর নেইর মাঝেই জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে আছেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ‘চরনজির’এর মানুষ।

দক্ষিণ-পূর্বদিকে তেঁতুলিয়া, উত্তর-পশ্চিমে বুড়াগৌরাঙ্গ নদী। এর মাঝখানে অবস্থিত ‘চরনজির’। যে চরের যাতায়াত শুধুই নৌপথ নির্ভর, বিকল্প আর কোন ব্যবস্থা নেই। তাই চরের বাসিন্দাদের যেখানেই যেতে হোক- পাড়ি দিতে হবে নৌপথ। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের আওতাধীন দুর্গম এ চরের অবস্থান।

চরনজিরে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার রয়েছে। তাদের প্রায় সবাই কৃষি ও মৎস্য পেশায় নির্ভরশীল। চরের বাসিন্দারা বলছেন, চরটি ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেখানকার মানুষেরাও নাগরিক নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন।
নদী ঘেরা এই চরের চারপাশে পানি থই থই করলেও তা লবণাক্ত। বিশুদ্ধ পানির বড়ই অভাব। হাতে গোনা ৬-৭টি গভীর নলকূপ আছে। কিন্তু জনসংখ্যা অনুপাতে তা পর্যাপ্ত নয়। চরের বাসিন্দাদের মতে, নেই স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। একারণে ডায়রিয়া ও সর্দি-কাশিসহ নানা রোগবালাইয়ে বারো মাসই ভুগছে এখানকার বাসিন্দারা। শিশুদের লেখাপড়া করার জন্য নেই কোন স্কুল-মাদ্রাসা। তাই শিক্ষা আলোতে নেই সেখানকার বহু শিশু। একারণে পরিবারের সঙ্গে কেউ হয়েছে কৃষি কাজের সঙ্গী, কেউ নদীতে মাছ ধরাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।  

এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য নেই সাইক্লোন শেল্টার। জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য নেই বেড়িবাঁধ।  আর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নেই কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা কমিউনিটি ক্লিনিক।
চরনজিরবাসীর প্রাথমিক শিক্ষা, স্যানিটেশন, সুপেয় পানি সংকটসহ নানা বিষয়ে সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাজ শুরু করেছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।


চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ২০২২ সাল থেকে চরনজিরে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ ও জাগোনারী’র প্রদৃপ্ত প্রকল্প। প্রকল্পের কর্মকর্তা জানান, চরবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গতবছর ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার কাচা রাস্তা, একটি বাশের সাঁকো, একটি পুকুর খনন এবং নদীপাড়ে একটি ঘাটলা নির্মাণ কাজ করা হয়। কিন্তু এসব কাজ পর্যাপ্ত নয়। এই চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে স্থায়ী সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। 
উল্লেখ্য, সত্তরের দশকে চরটি জেগে উঠলেও জনবসতি গড়ে ওঠে নব্বইয়ের দশকে। বর্তমানে চরটিতে প্রায় এক হাজারের মত মানুষের বসবাস।